অনেক সময় গতি পাল্টে যায়
সূচীপত্রঃ
সুক্ষ্ম মাত্রার মিশ্রণ নয় , মিশ্রণের সূক্ষ্মমাত্রা
পেটেন্ট মেডিসিন কি হোমিওপ্যাথিক মিশ্র ঔষধ ?
প্রাকৃতিক মিশ্রণ
এসিডিটিতে মিশ্র ঔষধ
ঔষধ প্রয়োগে ভ্রান্তির অবসান
হোমিওপ্যাথির দুর্বলতা
ফ্রিপিডিএফ কপি পেতে ক্লিক করুন ।
একনজরে দুইটি ঔষধের পরিবর্তে একটি ঔষধ এর লিস্ট দেখুন ।
সুক্ষ্ম মাত্রার মিশ্রণ নয় , মিশ্রণের সূক্ষ্মমাত্রা
উদাহরণ স্বরুপ একজন রোগীর কেস্টেকিং এ দেখলেন তাঁর মাঝে ন্যাট্রাম মিউরের যাবতীয় লক্ষণ আছে কিন্তু সালফারের লক্ষণ অনেক বিদ্যমান তাকে কি দিবেন ? আমি আমার বন্ধুবর এক হোমিও চিকিৎসককে প্রশ্ন করায় সে বলল যে, যেটা বেশি লক্ষণ প্রকাশপায় সেটা আগে দিব তাঁর পর অন্যটা দিব । মনে করেন প্রথমে কিছু দিন সালফার দিব তাঁর পর ন্যাট্রাম মিউর দিব । এটা ভুল সিদ্ধান্ত ; কিন্তু না , এটাই সমস্যা , খাইতে বসে কেউ কেউ আগে ভাত খেয়ে শেষ করে তারপর তরকারি খায়া না যদিয় ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য শুধু ভাত খেলেও চলত । দেশে অসংখ্য রোগী আছে যাদের শরীরে সালফারের উদ্ভেদ, চুলকানি , দাদা , একজিমা আছে কিন্তু তাদের কেস্টেকিং এ দেখা যায় তারা ন্যট্রাম মিউরের এবং সালফারের মিশ্র রোগী । এজন্য বছরের পর বছর কেউ সালফার কেউ ন্যাট্রাম মিউর দিয়ে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু রোগ নির্মূল হচ্ছে না । ডাক্তার মশায় যতোদোষ মেডিসিনের উপর আর ভেজাল খাদ্যের উপর ঝাড়ছেন । অথচ কেমেষ্ট্রি জ্ঞানে যাদের অভিজ্ঞতা আছে তারা এই ব্যাপারটি অনায়েসেই বুঝবেন যে তাঁর জন্য প্রয়োজন ন্যাট্রাম সালফ । হয়তো এরুপ মিশ্র ঔষধের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা থেকেই পেটেন্ট ঔষধের আবিষ্কার । হিপার সালফ , ক্যাল্কেরিয়া সালফ ও সাইলেসিয়া তিনটি মেডিসিনেই পুঁজ এর উপর চমৎকার ক্রিয়া আছে । কিন্তু দেখা যায় হিপার দিলেন কাজ হলো না দিলেন সাইলেসিয়া তাও কাজ হলো না তার পর দিলেন ক্যাকেরিয়া সালফ এয়ার কাজ হয়ে গেল । কিন্তু আপনি ভাবলেন একটি অপরটির পরবর্তী ঔষধ , লিখো রাখলেন । অন্যান্য রোগীতেও এভবেই প্রয়োগ করেন । কিন্তু আপনি যদি সূক্ষ্ম চিন্তা করে দেহতেন তাহলে দেখতে পেতেন রোগীর মাঝে হিপার সালফ ও সাইলেসিয়া দুইটার লক্ষণ প্রবল বিদ্যমান , কেমিস্ট্রি নজরে দিয়ে দেখলে দেখতে পেতেন এই দুইটির মিশ্রনের মেডিসিন ক্যালকেরিয়া সালফ । এরুপ অনেক মেডিসিন আছে যেগুলো একাই একাধিক মেডিসিনের চাহিদা মিটিয়ে দ্রুত রোগ আরোগ্য করে থাকে । দেখুন কিসুন্দর ভাবে মিশ্রনের সূক্ষ্মমাত্রা প্রয়গের অনুমতি ।
পেটেন্ট মেডিসিন কি হোমিওপ্যাথিক মিশ্র ঔষধ ?
পেটেন্ট মেডিসিন হচ্ছে সুক্ষ্ম মাত্রার কয়েকটি মেডিসিনের মিশ্রণ , মিশ্রণের সূক্ষ্মমাত্রা নয় । যা মেটেরিয়া মেডিকা বা অর্গানন অব মেডিসিন সমর্থন করে না । কারণ মেটেরিয়া মেডিকার ঔষধগুলো সুক্ষ্মমাত্রার ঔষধ । তাই উচিৎ হবে নির্ধারিত মেডিসিনের কেমিক্যাল মিশ্রণ করে তাঁর সূক্ষ্মমাত্রায় রুপান্তরিত করে ক্লিনিক্যাল রেজাল্ট সহ মেটেরিয়া মেডিকার উপযুক্ত করে তোলা তা পেটেন্ট বা যেকোনো বৈজ্ঞানিক নাম করণ করলেই চলে । যেমন – নেট্রাম মিউর ও সালফার এর মিশ্রণ নেট্রাম সালফ নামে মেটেরিয়া মেডিকায় স্থান করে নিয়েছে।
প্রাকৃতিক মিশ্রণ
একাধিক ঔষধের পরিবর্তে একক ঔষধ দেয়া মঙ্গল ও রোগ নির্মূল অরে থাকে । প্রাকৃতিতেই অনেক পূশধ লুকিয়ে আছে যা মিশ্র ঔষধের চাহিদা মেটাতে সক্ষম। এ সংক্রান্ত একটি তালিকা সম্বলিত পিডিএফ আছে আপনি ইচ্ছে করলে তা নিতে পারেন ।
ব্রায়োনিয়া ও একোনাইটের মিশ্র লক্ষণে ফেরাম ফস অধিক ফলপ্রসু । ফসফরাস ও ফেরাম মেট এর মিশ্রণে ফেরামফস কে স্মরণ করবেন ।
ধরুন একটি রোগীর মাঝে সালফার ও সোরিনামের মিশ্র লক্ষণ দেখতে পাচ্ছেন তাকে কি দিবেন ? তাঁর জন্য সমাধান একমাত্রা টিউবারকুলিনাম
ন্যাট্রাম মিউর ও ফসফরাস মিশ্রণে ন্যাট্রাম ফস । অনুরুপ ভাবে কেলি মিউরো + ফসফরস = কেলি ফস । কেলি সালফ ও পালসেটিলার রাসায়নিক গুণ প্রায় একই । কেলি মিউর + সালফারের মিশ্রতায় কেলিসালফ বা পালসেটিলা দিলে অবশ্যই অল্পসময়ে রোগারোগ্য হতে পারে ।
শ্বাসকষ্টের সমস্যায় অনেক সেনেগাকে অমোঘ হিসেবে নিয়ে থাকেন । স্বীকার করি, সেনেগা সুন্দর কাজ করে কিন্তু যদি সূক্ষ্ম চিন্তা করে দেখতেন রোগী ব্রায়োনিয়া ও রাস টক্সের মিশ্র কি না । যদি মিশ্র হয়ে থাকে কোনো কথা নাই সেনেগাই অগ্রগণ্য ।
অনেকেই যুক্তি দেখাবেন যে সেনেগা মিশ্র ঔষধ নয় আমরা রেপার্টরী থেকে সেনেগার লক্ষণ পেয়েই তাঁর প্রয়োগ করে থাকি । এটা অনেক শুভ সংবাদ যে আপনি সেনেগাকে রেপার্টরী থেকে নির্বাচন করেছেন। কিন্তু যখন রোগীর মধ্যে রাসটক্স ও ব্রয়োনিয়ার লক্ষণ প্রবল পেলেন সেগুলোকে কিভাবে অবজ্ঞা অরে সেনেগায় গেলেন তা আমার বোধগম্য নয় । ইগো নয় আসুন বুঝে শুনে কথা বলি ও কাজ করি। আসুন হোমিওপ্যাতকি সূক্ষ্ম মাত্রার সূক্ষ্ম ঔষধ প্রয়োগের আগে নিজের চিন্তা ভাবনা কে সুক্ষ্ম করে তুলি ।
এসিডিটিতে মিশ্র ঔষধ
অম্ল বা এসিডিটিতে অনেকেই ন্যাট্রাম ফস (Na3PO4) দিয়ে থাকেন ,সুন্দর কাজ হয় । কিন্তু বুকজ্বালা কর এসিডিটিতে নাট্রাম সালফ মন্ত্রের মত কাজ করে যদি সাথে ম্যাগ ফস দেয়া যায় । ম্যাগফসে আছে Mg3(PO4)2 + (ন্যাট্রাম সালফে)Na2 SO4 এদের মিশ্রনে ম্যাগ্নেসিয়াম , সোডিয়াম ও সালফার , ফসফরাস চারটি উপাদানের অভাব মিটে যায় । এখানে ন্যেট্রাম ও ফসফেট একত্রে নেট্রামফসের চাহিদা মিটাচ্ছে সাথে ম্যাগ্নেস্যামের ও সালফারের অভাব পুরন করছে । জ্বালা সালফারের লক্ষণ যা এসিডটিতে প্রায় রোগীতে দেখা যায় । বুক খিচে ধরা রোধে ম্যগাফস মন্ত্রবৎ ক্রিয়া করে । ন্যাট্রাম সালফ একধরেন হোমিওপ্যাথিক মিশ্র ঔষধ । এলপ্যাথগন এন্টাসিডে ম্যাগ্নেসিয়াম হাইড্রোক্সাইড ব্যাবহার করে এমনকি সিরাপের নাম মিল্ক অব ম্যাগ্নেসিয়া নামে বাজেরে বিক্রিও হয়ে থাকে । সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে খুঁজতে হবে কোন উপাদান কি কাজ করে । এখানে ফসফেট নেই তাই ন্যাট্রাম ফসের চেয়ে ম্যাগফস অধিক কার্যকর , জ্বালার সাথে ন্যাট্রাম সালফ এর চমৎকার মিল । হ্যা , অম্ল বলতে টক গন্ধ থেকে ন্যাট্রাম্ফসকে অবশ্যই স্মরণ করতে হবে । তবে দাঁত , জিহ্বা , মল , মূত্র, ঘাম সবকিছুই টক বা অম্ল লাগলে এবং অম্ল ঢেকুর সহ এসিডিটি হলে রুবিনিয়া চমৎকার ফলপ্রদর্শন করে থাকে। তাহলে বলাচলে ন্যাট্রাম ফসের সাথে রুবিনিয়ার সাদৃশ্যতা আছে ।
ঔষধ প্রয়োগে ভ্রান্তির অবসান
মনে রাখবেন মহাত্মা হ্যানিম্যান ধারণার বশিভূত হয়ে কোনো মেডিসিন তৈরি বা প্রোয়গ করেননি । তিনি কেমিস্ট্রি , বায়োলজি , মেডিসিন বিষয়ে অগাধ পান্ডিত্য থেকেই হোমিওপ্যাথির জন্ম দিয়েছেন । এলোপ্যাথি , আয়ুর্বেদ, হোমিও , বায়োকেমিক এসবের মূল উপাদান বা উৎস একই প্রকার খনিজ ,গাছপালা,থেকে । শুধু প্রয়োগের বিধান আলাদা । আয়ুর্বেদ সবকিছুই একসাথে মিশ্রিত করে খাইয়ে দেয় । এলোপ্যাথ সেখান থেকে প্রয়োজনীয় উপাদান বেরকরে নিয়ে সেটুকুই প্রয়োগ করে আর হমিওপ্যাথ এলোপ্যাথের মেডিসিকে বা তার মৌলিক উপাদানকে লক্ষ লক্ষ গুন সূক্ষ্ম করে তা প্রয়োগ করে থাকেন । আধুনিক এলোপ্যাথগণ যে সকল চিকিৎসা দিয়ে থাকেন তা এলোপ্যাথের একক কোন চিকিৎসা নয় । যেমন ক্রায়োসার্জারি , আকুপাংচার , এন্টিবায়োটিক , টিকা এসব কি তাদের নিকট ছিল ?এক্স রে , সিটিস্ক্যান , ল্যাবটেস্ট এসব পদার্থ অ রসায়নের অবদান না তারা এগুলোকে তাদের চিকিৎসা শাস্ত্রে গ্রহন করেছেন ফলে আজ তারা অনেক সংঘঠিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়ে উঠেছেন। চিকিৎসা শাস্ত্র হিসেবে আমাদের হোমিওপ্যাথদের এগুলোকে ব্যাবহারের অনুমতি আছে এবং দরকার ।
হোমিওপ্যাথির দুর্বলতা
মহাত্মা হ্যানিম্যান আমাদের হোমিওপ্যাথির পথিকৃত ,তিনিও এরুপ অনেক মিশ্রমিডিসিনের প্রয়োগ করে গেছেন । যেমন সিঙ্কোনা গাছের মধ্যে অনেক প্রকার জৈব ও অজৈব উপাদান রয়েছে যা চায়নার লক্ষণ ফুটেতোলে এবং আমরা চায়না প্রয়োগ করে থাকি । কিন্তু এর বিশ্লেষণে দেখা যায় এর মাঝে নেট্রাম মিউর ও ফেরাম ফস নামক উপাদান দুইটি আছে যা বায়োকেমিক চিকিৎসায় ব্যাবহার হয়ে থাকে। এমন কি হোমিওমতেও ফেরাম ফস + ন্যাট্রাম মিউরের মিশ্রণ চায়ানার এই মেলেরিয়া লক্ষণ সারাতে দারুন কার্যকর । গোঁড়ামি উন্নতির প্রতিবন্ধক ,হাতরিয়ে চিকিৎসা না করে ঔষধের রাসায়নিক উপাদানের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে । যে ব্যাপারে আমরা অনেকেই উদাসীন । এর অন্যতম কারণ আমাদের কেমেস্ট্রি ও বায়োলজি বিষয়ে অজ্ঞতা । চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির পিছনে কেমেষ্ট্রি ও বায়োলজির অবদান সবচেয়ে বেশি । হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের একটা বিরাট অংশ বিজ্ঞান বিষয়ে অনভিজ্ঞ , যেমন মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরাও এই চিকিৎসায় সংশ্লিষ্ট আছেন তাদের অবজ্ঞা করে লিখছি না । তাদের দুর্বলতা যে, তারা কেমিক্যাল সম্পর্কে বা কেমিষ্ট্রি ও বায়লজি সম্পর্কে ততো গভীর জ্ঞান রাখেন না । আমাদের হোমিও অগ্রগতির জন্য সব বিভাগের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে । চিকিৎসক হতে হলে অবশ্যই বায়োজলি ও কেমিস্ট্রি সম্পর্কে গভীর ধারণা থাকা দরকার । সেদিকে সকলের নজর দেয়া কর্তব্য ।
No comments:
Post a Comment
Please do not any spam in the comments Box.